বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি! আহ, কত স্মৃতি এই বৃষ্টিকে ঘিরে!
আজ থেকে অনেক বছর আগের কথা বলছি। আমার জন্মস্থান সিলেট হলেও আম্মুর সরকারি চাকরির বদৌলতে তখন কুমিল্লায় থাকতাম। অনেক আগের কথা, তার উপর আমার স্মৃতিশক্তি বেশ দূর্বল। তবে যতদূর মনে পড়ে আমরা কুমিল্লার চকবাজারের আশেপাশে কোথাও ভাড়া থাকতাম। খুব সম্ভবত হাউজিং এস্টেট নামে কোনো এক এলাকায়।
আমার বয়স তখন ৫ কি ৬ বছর। আমাদের বাসার পাশেই বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন একটা স্কুল ছিল, নাম ছিল “বুলবুল প্রি-ক্যাডেট এন্ড ইংলিশ মিডিয়াম হাই স্কুল”। আমি তখন সেই স্কুলের প্রি-নার্সারিতে পড়ি। এতদিন পরও আমার স্মৃতির খাতায় স্কুলের নামটা বেশ স্পষ্ট, এর কারণ আছে অবশ্যই! আমি যে জনম বিটলা কারণটা জানলেই সেটা বুঝতে পারবেন।
আমাদের স্কুলের মাসিক পরীক্ষায় স্কুলের নাম ইংরেজিতে বানান করে লিখার একটা প্রশ্ন আসে। এই প্রশ্ন কেউ পারে নাই, একমাত্র আমিই এক্কেবারে অক্ষর বাই অক্ষর লিখে দিয়ে এসেছিলাম। স্কুলের স্যারদের তো চক্ষু চড়কগাছ! প্রি-নার্সারির ছেলে কিভাবে পারল এই প্রশ্ন! রহস্য কিন্তু মোটেও জটিল নয়, খোলাসা করি। আমাদের স্কুলের মাসিক পরীক্ষার জন্য ক্লাসের খাতার মতন আলাদা খাতা ছিল। খাতার স্কুলের লোগো ছিল, লোগোর মাঝে স্পষ্ট অক্ষরে স্কুলের নাম লেখা ছিল। আমি মেরে দিসি।
যাই হোক, বৃষ্টি নিয়ে কথা হচ্ছিল না? মূল টপিকেই ফিরে যাই।
আমাদের পাশের বাসায় এক চাঁদপুরী ফ্যামিলি ভাড়া থাকত। উনাদের দুইটা ছেলে ছিল। ছোটজনের নাম তারেক, মোটামোটি আমার বয়সী। তারেক ছিল আমার নেংটাকালের বেস্ট ফ্রেণ্ড। আমাদের একটা সার্কেল ছিল, আরো ৪-৫ জন “বড় ভাই” ছিল। আমরা সবসময় একসাথে বাঁদরামি করতাম, ঝগড়া করতাম, একসাথে খেলতাম।
তারেক আর আমি ছিলাম একটু অন্যরকম। আমরা অন্য কারো সাথে খুব বেশি কথা না বললেও নিজেরা অনেক বেশি ফ্রি ছিলাম, আমার সব কাজের সঙ্গী ছিল তারেক। আমাদের বাসার সামনে অনেক বড় একটা মাঠ ছিল, মাঠের একপাশে বালু দিয়ে ভর্তি। বৃষ্টির দিনে আমরা একসাথে বালুর মাঝে খেলতাম। শুধু তারেক আর আমি, মাঝেমধ্যে সিয়াম নামে একটা ছেলে ছিল সে। তারেক আর আমি বৃষ্টির পর ভেজা বালু দিয়ে বিভিন্ন ফিগার বানাতাম। বালুর স্নোম্যান, চড়ুই পাখি, ডাইনোসর, পাখির বাসা – আমাদের আইডিয়ার কোনো শেষ ছিল না!
তারেক এখন বাপের চাকরির জন্য রাঙামাটি। আমি এক ক্লাস গ্যাপ দিয়ে এখন বড়ভাই, বেচারা এ বছর কলেজে উঠবে। হয়ত আমাদের দেখা হয় না অনেক বছর, হয়ত আরো অনেক বছর দেখা হবেও না। শুধু স্মৃতিগুলো থাকবে চিরদিন। ❤